বুধবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৩

ব্যবহারিকঃইলেকট্রনিক্স; আসুন মজা করে ইলেকট্রনিক্স কাজ শিখি। আরে ইলেকট্রনিক্স এত সহজ! প্রথম পর্ব :) :) :(

Leave a Comment
আমাদের অনেকেরই প্রিয় শখ হল ইলেক্ট্রনিক্স। হাতের কাছে কোন ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র পেলেই অনেকেই খোঁচানো শুরু করি। হয়তো অনেকেই ছোট বেলায় কোন ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র যেমন ডিজিটাল ঘড়ি বা ক্যালকুলেটর কৌতুহল বসত খুলে তা আর ঠিক মত লাগাতে পারিনি। যার ফলে আব্বু আম্মুর কাছে বকুনি খেয়ে হয়েছে। তার পরেও কি কমেছে আমাদের জানার আগ্রহ। আজ আমি আপনাদের সামনে ইলেক্ট্রনিক্স এর বিশাল জগতের মধ্য থেকে সামান্য কিছু তুলে ধরব। প্রথমেই বলে নিই, আমি খুব বেশি জানি না আমি নিজে শিখছি এবং যা শিখছি তা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। আমি চেষ্টা করেছি খুব সহজ ভাষায় বর্ণনা দিতে। কোন প্রকার ভুল ত্রুটি হয়ে গেলে অবশ্যই জানাবেন।
তাহলে শুরু করি...
ইলেক্ট্রনিক নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে গেলে যে নামটি আগে আসে সেটা হল রেজিস্টর। আজ আমি রেজিস্টর ও এর কালার কোড সম্পর্কে আলোচনা করব।

রেজিস্টর
রেজিস্টরঃ রোধক বা রেজিস্টর (Resistor) তড়িৎ বর্তনীতে (Electric Circuit) ব্যবহৃত, দুই প্রান্ত বিশিষ্ট একপ্রকার যন্ত্রাংশ । এর কাজ হল তড়িৎ প্রবাহকে (Electric Current) রোধ করা বা বাধা দেয়া। তড়িৎ বর্তনীতে থাকা অবস্থায় রোধক তার দুই প্রান্তের মধ্যে বিভব পার্থক্য (Potential Difference) সৃষ্টি করার মাধ্যমে প্রবাহকে বাধা দেয়
সহজ কথায় যে ডিভাইস বিদ্যুৎ প্রবাহে বাধা প্রদান করে তাকে রেজিস্টর বলে।
এর একক ওহম (Ω)। একে R দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

রেজিস্টরের প্রকারভেদঃ রেজিস্টর মূলত ৬ প্রকার। যথাঃ
১। ওয়্যার উন্ড টাইপ
২। ভেরিয়েবল টাইপ
৩। কার্বন টাইপ
৪। ফিজিউবল টাইপ
৫। টেম্পারেচার সেনসিটিভ টাইপ
৬। ডিপোজিটেড কার্বন টাইপ।

১। ওয়্যার উন্ড টাইপঃ যে রেজিস্টর ওয়্যার বা তার দ্বারা পেঁচিয়ে তৈরি করা হয় তাকে ওয়্যার উন্ড টাইপ রেজিস্টর বলে।
২। ভেরিয়েবল টাইপঃ যে রেজিস্টরের মান পরিবরতন যোগ্য, অর্থাৎ যে রেজিস্টরের মান পরিবর্তন করা যায় তাকে ভেরিয়েবল টাইপ রেজিস্টর বলে।

৩। কার্বন টাইপঃ যে রেজিস্টর কার্বন দ্বারা তৈরি হয় তাকে কার্বন টাইপ রেজিস্টর বলে।
৪। ফিজিউবল টাইপঃ এই প্রকার রেজিস্টরের ভিতর দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমানের চেয়ে বেশি পরিমানে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে এটি আপনা আপনি ফিউজড(কেটে) যায়। এই রেজিস্টর এমন ভাবে ডিজাইন করা হয় যেন এটা একটা সার্কিটকে ওভার লোড হতে রক্ষা করে।
৫। টেম্পারেচার সেনসিটিভ টাইপঃ তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে সাথে যে সকল রেজিস্টরের মান পরিবর্তন হয় তাকে টেম্পারেচার সেনসিটিভ টাইপ রেজিস্টর বলে।
৬। ডিপোজিটেড কার্বন টাইপঃ কাঁচ অথবা সিরামিক জাতীয় পদার্থের উপর কার্বনের বাষ্প জমিয়ে ডিপোজিটেড কার্বন টাইপ রেজিস্টর প্রস্তুত করা হয়।

কালার কোড দ্বারা রেজিস্টরের মান নির্ণয়
কালার কোড দ্বারা খুব সহজেই আমারা মিটার ছাড়ায় যে কোন রেজিস্টরের মান নির্ণয় করতে পারি। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে কালার কোড কি? উত্তর হল, প্রতিটা রেজিস্টরের গায়ে বিভিন্ন প্রকার রঙ দ্বারা চিহ্নিত করা থাকে এগুলোকে কালার কোড বলে। কালার কোডের প্রতিটি প্যাচকে ব্যান্ড বলে। রেজিস্টর সাধারনত ৪(চার) ব্যান্ডের বেশি হয়ে থাকে, এছাড়াও ৫ ও ৬ ব্যান্ডের রেজিস্টরও পাওয়া যায়। এখানে সাধারনত ১২ প্রকার কালার ব্যবহার করা হয়। যেগুলো হলঃ কালো, বাদামী, লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল, বেগুনি, ধূষর, সাদা এছাড়াও টলারেন্স এর জন্য সোনালী ও রুপালী কালার ব্যবহার করা হয়। সংক্ষেপে এই কালার গুলোকে বলা হয়ঃ কা, বা, লা, ক, হ, স, নী, বে, ধূ, সা। প্রতিটি বিভিন্ন ব্যান্ডে বিভিন্ন মান রয়েছে তা নিচে একটি চার্টের মাধ্যমে দেখানো হল।
(এই চার্টটাই হইল আসল মাল এইডা বুঝন কম্পুলসারি)

এই চার্টটা আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে। এখন কাজে আসা যাক। কিভাবে আমারা রেজিস্টর মাপব? মনে করি আমার কাছে এই রেজিস্টরটা আছে

সবার আগে আপনাকে রং চিনতে হবে। আপনি নিজে না চিনতে পারলে আপনার ওয়াইফ বা জিফ এর সাহায্য নিন কারণ মেয়েরা কালারের ব্যাপারে ছেলেদের চেয়ে বেশি এক্সপার্ট। উপরের রেজিস্টরটা ৪ কালার ব্যান্ডের একটি রেজিস্টর । অর্থাৎ এখানে ৪ টি কালার আছে। ১ নং ব্যান্ডের রং বাদামী, ২ নং ব্যান্ডের রং কালো, ৩ নং ব্যান্ডের রং লাল ৪ নং ব্যান্ডের রং সোনালী।
তাহলে আমরা এখন হিসাব করি। চার্টের দিকে তাকায়। এখানে দেখি বাদামী রঙের ১ম মান কি আছে? বাদামীর ১ম মান =১, এরপর কালো, এর দ্বিতীয় মান= ০, তারপর লাল, লালের ৩য় মান= ×১০০। মান দেখা শেষ। এবার ক্যালকুলেশন, নিয়ম হল প্রথম ও ২য় মান পরপর বসে যাবে এবং ৩য় মান গুন হিসাবে বসবে অর্থাৎ,
১০×১০০=১০০০ Ω=১KΩ[ যেহেতু ১০০০Ω = ১KΩ।]
সহজ বুদ্ধি হল তিনটা মান সিরিয়ালে বসিয়ে দিবেন। কিছু বুঝলেন? নিশ্চয় বুঝেছেন। না পারলে নিচের চিত্রটি দেখুন। আর ৪র্থ ব্যান্ড ব্যবহার হয় রেজিস্টরের টলারেন্স নির্ণয়ের জন্য। এখানে ৪ নং ব্যান্ডের কালার সোনালী, সোনালীর ৪র্থ মান ±১০%। অর্থাৎ কাজক্ষেত্রে আমারা ১০০০ Ω বা ১KΩ ১০% কম বা বেশি মানের রেজিস্টর ব্যবহার করতে পারব।


আচ্ছা এবার আমরা আর একটা রেজিস্টরের মান নির্ণয় করি।

এখানে প্রথম, ২য় ও ৩য় ব্যান্ডের কালার যথাক্রমে বাদামী, লাল এবং কমলা। চার্ট আনুযায়ী আমারা হিসাব করি। বাদামীর ১ম মান ‘১’ লালের ২য় মান ‘২’ এবং কমলার দ্বিতীয় মান ‘×১০০০’। তাহলে হিসাব নিকাশ দাঁড়ায় ১২×১০০০=১২০০০Ω = ১২KΩ[ যেহেতু ১০০০Ω = ১KΩ।]
৫ ব্যান্ড কালার কোড প্রায় একই রকম। এখানে ১ম, ২য় ও ৩য় মান একত্রে(পাশাপাশি) বসবে ৪র্থ ব্যান্ডের মান গুণিতক হিসাবে বসবে। ৫ম ব্যান্ড রেজিস্টরের টলারেন্স নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয় ।

আচ্ছা একটা ৫ ব্যান্ডের রেজিস্টর দেখি ও এর মান নির্ণয় করি।

উপরে দেখতে পাচ্ছি ১ম ব্যান্ডের রঙ লাল(২), ২য় ব্যান্ডের রঙও লাল (২), ৩য় ব্যান্ডের রঙ কাল (০), ৪র্থ ব্যান্ডের রঙ লাল(গুণিতক ১০০)। তাহলে আমরা হিসাব করে দেখতে পাচ্ছি যে ২২০×১০০ = ২২০০০KΩ এবং ৫ম ব্যান্ডের কালার দ্বারা এর টলারেন্স দেখান হয়েছে।

রেজিস্টর সংযোগ সুত্রঃ রেজিস্টর দুইটি সংযোগ সুত্র মেনে চলে। সুত্র দুটি নিম্নরূপঃ
১. সিরিজ সংযোগঃ
২. প্যারালাল সংযোগঃ

কোন প্রকার ভূল হয়ে গেলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
© আহমেদ সজীব আমান
রিপোস্ট করলাম। কাল রাতে এত কষ্ট করে পোস্টটা দিয়েছিলাম কিন্তু সেটা নির্বাচিত পাতায় যায়নি। কারন ভাল লেখা আমরা পড়ি না।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন