বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

Leave a Comment

কম্পিউটারে ভাইরাসের কর্মকান্ড ও তা থেকে পরিত্রাণের উপায় - ১



তথ্যের সমুদ্রে ভেসে বেড়াব আর কম্পিউটারে কোনপ্রকার আঁচড় লাগবে না - এটা ভাবাই যায় না। বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির যুগে কম্পিউটার ভাইরাস কর্তৃক আক্রান্ত না হওয়াটাই বরং অস্বাভাবিক। তাই বলে ভাইরাসের ভয়ে জালের মত সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা ইন্টারনেটেও যাওয়া বন্ধ করা যায় না কারণ ইমেইল চেক করা, ফেসবুকে স্ট্যাটাস আপডেট কিংবা বন্ধুদের পোস্টকরা কোন মেসেজ চেক, পত্রিকা পড়া এখন আমাদের দৈনন্দিন কাজের সাথে মিশে গিয়েছে। এছাড়াও আছে ইউটিউব বা নেটফ্লিক্সে মুভি, প্রয়োজনীয় ডাউনলোড ইত্যাদি। ভাইরাসকে প্রতিরোধ করা ও ধ্বংস করার জন্য কোম্পানিগুলোও বসে নেই। তারা বের করে চলছে একের পর এক অ্যান্টি-ভাইরাস, সেগুলির আবার আপডেটেড ভার্সন। তারপরেও রক্ষা হয় না, কম্পিউটার ধীরগতির হয়ে যাওয়া, হ্যাং বা ফ্রিজ হওয়া, হার্ডড্রাইভ ক্রাশ - এগুলোতো লেগেই আছে।তাই বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ভাইরাস সম্পর্কে জানাটা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। কথায় আছে, সমস্যা সমাধাণের আগে সমস্যাটা ভালো করে বুঝতে হবে, তারপরেই শুধুমাত্র চমৎকার একটি সমাধান পাওয়া যাবে। তাই এখানে প্রথমেই আমি  ভাইরাস কি, ভাইরাসের প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করব, তারপরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করব।
 
ভাইরাস কী এবং কেন?

কম্পিউটারে ভাইরাস জীবন্ত কোন অর্গানিজম নয় কিন্ত এটি এমন একটি প্রোগ্রাম যা কম্পিউটারে জীবন্ত প্রাণীর মতই আচরণ করে।চিকিৎসাবিদ্যায় ভাইরাসের কারণে যেমন মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে, ঠিক তেমনি কম্পিউটারটিও ভাইরাসের অত্যাচারে অকেজো হয়ে যেতে পারে। তবে কম্পিউটারের এই ভাইরাস মানুষের দ্বারাই তৈরি প্রোগ্রাম।
ধরা যাক, আপনার কম্পিউটারে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্প্রেডশিট আছে এবং কম্পিউটারটি ভাইরাস কর্তৃক আক্রান্ত হয়ে আছে যা আপনি হয়তবা জানেন না। এই ভাইরাসটি নিঃশব্দে সুকৌশলে অল্প অল্প করে আপনার স্প্রেডশিটের তথ্য পাল্টে দিতে পারে এবং আপনি হয়তবা টেরই পাবেন না যতক্ষণ না বিরাট পরিবর্তন হবে এবং যখন টের পাবেন তখন হয়তবা করার কিছুই থাকবে না। আপনি হয়তবা নিয়মিত ব্যাকআপ করেন, কিন্তু ব্যাকআপে গিয়ে দেখলেন যে সেখানেও ভুল তথ্যই ব্যাকআপ হয়ে আছে। আবার ধরুন, আপনি পিএইচডির স্টুডেন্ট এবং শেষপর্যায়ে। ডেজার্টেশন প্রায় রেডি। আপনার সন্তান হয়তবা আপনার পিসিতে নূতন একটি গেইম ইনস্টল করেছে যার সাথে একটি ভাইরাসও ইনস্টল হয়ে গেছে এবং এই ভাইরাসটির কাজ হচ্ছে ফাইল মুছে দেওয়া। এক সকালে পিসি চালু করে আবিষ্কার করলেন যে, আপনার ফাইলটি পিসি থেকে গায়েব।মাথার চুল ছেঁড়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই। আবার, ইমেইলও হয়ে উঠতে পারে ভয়ানক। এমনও হতে পারে যে, আপনি পরিচিত কারো একটি ইমেইল পেলেন এবং ইমেইলটি খোলার সাথে সাথেই হয়তবা ইমেইলে সংযুক্ত একটি ভাইরাস আপনার অগোচরে কাজ করা শুরু করে দিল। এই কাজটি কিন্তু অত্যন্ত ভয়ানক হতে পারে। এটি এমন একটি ভাইরাস হতে পারে যার কাজ হল আপনার পিসি-তে কিংবা মেইল ফোল্ডারের সব ব্যক্তিগত গোপন তথ্য আপনার অ্যাড্রেস বুকে সংরক্ষিত সব ইমেইল অ্যাড্রেসে পাঠানো শুরু করে দেয়া।ভাইরাসের কর্মকান্ড অনেক। প্রকৃতি-ভেদে একেকটা ভাইরাস একেক রকমের কাজ করে।

আমি এই লেখাটিতে মুলতঃ ভাইরাসকে বোঝা ও এর কবল থেকে রক্ষা পাওয়া নিয়ে আলোচনা করব, তাই ভাইরাসের বিস্তারিত ইতিহাসের দিকে যাব না। তবে ইন্টারেস্টিং কিছু বিষয় বলব।
বিখ্যাত গণিতবিদ জন ভন নিউম্যান (John Von Neumann) সর্বপ্রথম ১৯৪৯ সালে একটি প্রোগ্রাম কীভাবে নিজে নিজের আরেকটি কপি তৈরি করতে পারে (self-replicating) তা সম্পর্কে বলেন যদিও তখনো কম্পিউটার ভাইরাস শব্দটির সাথে কেউই পরিচিত হন নি। তারপর সত্তর দশকের প্রথম দিকে আরপানেট-এ (ARPANET) প্রথমে ক্রিপার (Creeper) ধরা পড়ে। এটাও ছিল একটি সেলফ-রেপ্লিকেটিং প্রোগ্রাম এবং এটা লিখেন বব থমাস (Bob Thomas) ১৯৭১ সালে। তখন অপারেটিং সিস্টেম ছিল টেনেক্স (TENEX) আর ক্রিপারের কাজ ছিল অন্য একটি সিস্টেমে গিয়ে নিজের একটি কপি তৈরি করা ও একটি মেসেজ দেখানো , "I'M THE CREEPER : CATCH ME IF YOU CAN."। এটিকে প্রতিহত করার জন্য তৈরি হয় রিপার (Reaper) যার কাজ ছিল ক্রিপার-কে মুছে ফেলা।তারপরে যেটি আলোচনা না করলেই নয় সেটি হল, পিসির প্রথম ভাইরাস তৈরি হয় পাকিস্তানের লাহোরের ফারুক ভ্রাতৃদ্বয়ের হাতে।বাসিত ফারুক আলভি (Basit Farooq Alvi ) ও আমজাদ ফারুক আলভি (Amjad Farooq Alvi) নামে দুই ভাই মিলে বুট-সেক্টর (Boot Sector) ভাইরাস ‘ব্রেন’ (Brain) লিখেন ১৯৮৬ সালে। অবশ্য তাদের মতানুযায়ী তারা এটা লিখেছিলেন সফটওয়্যার পাইরেসি রোধ করার জন্য।তারপর থেকে আজ পর্যন্ত আর থেমে থাকেনি, তৈরি হচ্ছে নূতন নূতন ভাইরাস।চলুন এবার সবরকমের ভাইরাসের সাথে পরিচিত হই।(চলবে)
সঞ্চয় রহমান
ভার্জিনিয়া, যুক্তরাষ্ট্র

সংশোধনীঃ
আমার এক বন্ধু ‘ওবায়দুল হক’ যার বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে উচ্চতর ডিগ্রী আছে, সে আমার এই লেখাটির প্রশংসা করেছে, কিন্তু একটি ভূলও ধরিয়ে দিয়েছে।আমার বায়োলজী জ্ঞান ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত, তারপর আর বায়োলজী পড়া হয়নি।
অনেকেই হয়তবা ব্যাপারটি জানেন আবার অনেকে না জেনেও থাকতে পারেন। যারা না জানেন, তাদের জন্য বন্ধুর সাথে ইমেইল কনভার্সেশনটি দিয়ে দিলামঃ
 
ওবায়দুল হক : Good, Just minor correction actually virus in real world could not be characterized as living organism because they do not have nucleous and they could not replicate on their own. Virus needs a host to replicate.
 
আমিঃ Good info. Thanks. I'll change it. Just wondering....what do you call virus then?.....they are living.....?
 
ওবায়দুল হকঃThey are in between, they are actually nothing but a strain of either a DNA or RNA. A living cell needs both DNA and RNA in there nucleous. Virus is just a single strain of DNA or RNA encapsulated in a protein encapsulation. They are kind of parasite so when they come in contact with the host cell it replicates it's DNA or RNA sequence and go undetected by the immune system of the Body.

এখন কথা হল, ভাইরাসের উপরোক্ত সংজ্ঞায় আমার লেখাটির কী হবে? আমি লিখেছিলাম, “কম্পিউটারে ভাইরাস জীবন্ত কোন অর্গানিজম নয় কিন্ত এটি এমন একটি প্রোগ্রাম যা কম্পিউটারে জীবন্ত প্রাণীর মতই আচরণ করে”
আমি লেখাটি পরিবর্তন করলাম না।প্রথমতঃ আমার লেখাটি কম্পিউটারের ভাইরাস নিয়ে। দ্বিতীয়তঃ আমার বন্ধুর কথা অনুযায়ী, অণুজীববিজ্ঞানে ভাইরাস হল ইন-বিটুইন, তাছাড়া এর ডিএনএ অথবা আরএনএ আছে। এটা জীবন্ত অর্গানিজমের মতই আচরণ করে - অন্ততঃ আমাদের মত সাধারন মানুষ যাদের অণুজীববিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রী নেই, তাদের কাছে। কম্পিউটারের ভাইরাসটিও তো প্যারাসাইটের মতই, এটা রেপ্লিকেট করার জন্য কোন ডিভাইস (পিসি, মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট) লাগে। আমাদের এই ডিভাইসটিও হোস্ট-এর মতই।
ধন্যবাদ রাজু (আমার বন্ধুর ডাক্‌নাম)।
by priyo blog

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন