মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

চাচা কাহিনী (বিটলামীর একটা সীমা থাকা উচিত :) )

Leave a Comment
আজ আপনাদের সামনে চাচা কাহিনী তুলে ধরব। এই চাচা কাহিনী সৈয়দ মুজতবা আলীর সেই “চাচা কাহিনী” নয়। এটা আমার চাচার কাহিনী।
আমার এই চাচা ছিলেন বিটলামিতে অতুলনীয়। পিচ্চি থেকে বুড়া কাওকেই রেহাই দিতেন না। মাথায় সবসময় শয়তানী চিন্তা কাকে কিভাবে শায়েস্তা করা যায়। চাচার বিটলামীর টপ লিস্ট থেকে কয়েকটা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।

এক
চাচা তখন রাবির ছাত্র। নামাজ কালামের ধারে কাছে যেতেন না। এনিয়ে দাদী খুব চিন্তিত । কি করা যায়? তখন তিনি প্রায় জোর করেই তাবলীগে পাঠালেন ছেলেকে। যা হোক চাচা শান্ত ছেলের মতই গেলেন। নামাজ কালাম ও ধর্ম বিষয়ক অনেক কথা বার্তা ইতিমধ্যে শিখে ফেলেছেন। তারপর ফ্রিতে খাওয়া থাকা, বেশ ভালই দিন চলে যাচ্ছিল তার। মাঝে মধ্যে যে শয়তানী চিন্তা ভাবনা মাথাতে আসছে না তা নয়। একদিন খেয়াল করলেন খাবার সময় বড় হুজুর থাকেন না। তার খাবার আলাদা ভাবে দেওয়া হয়। আপনারা জানেন তাবলীগে সবাই একটা বড় প্লেটে গোল হয়ে বসে খায়। চাচা সুযোগ বুঝে একসময় হুজুরের খাবার চেক করে দেখলেন। হ্যাঁ, অনুমান সত্যি, মুরগীর বড় বড় দুইটা ঠ্যাং সহ আরও অনেক গোস্ত রাখা হয়েছে। চাচা তখন মনে মনে ভাবলেন ‘এই ব্যপার! আপনি মুরগীর ঠ্যাং আর আমরা কচুর লতি, দেখাচ্ছি মজা।’ কিন্তু কিভাবে হুজুরকে শায়েস্তা করা যায় এ নিয়ে তিনি বেশ চিন্তিত, এ সময় মনে পড়ল হুজুরের সেন্ডেলের কথা। হুজুরের সেন্ডেল জোড়া বেশ দামী এবং নতুন। তিনি সেগুলো মেরে দিলেন। যথারীতি বিক্রি করে পুরদস্তুর নাস্তা করলেন। ফিরে এসে দেখলেন হুজুর বেজার মুখে বসে আছে। কি হয়েছে বলতেই হুজুর তার সেন্ডেল বিলাপ শুরু করে দিলেন, চাচাও তার সাথে শামিল হলেন এবং হুজুরের সেন্ডেল হারানোর ব্যপারে গভীর সমবেদনা জ্ঞ্যাপন করলেন এবং প্রস্তাব দিলেন “হুজুর আগামী ওয়াক্তে পাশের মসজিদ থেকে কি একজোড়া আপনার জন্য চুরি করে নিয়ে আসব?” হুজুর কড়া কথা বলতে গিয়ে থেমে গেলেন, শেষমেশ বলেই ‘ফেললেন যাও নিয়া আস।’ চাচা মনে মনে ভাবলেন ব্যটাই টোপ গিলছে। যাক হুজুরের হুকুম মত পাশের মসজিদ হতে সবচেয়ে দামী ও নতুন সেন্ডেল জোড়া চুরি করে এনে হুজুরের সম্মুখে হাজির করলেন। হুজুরতো বেসম্ভব খুশি! এ যে তার খোয়া যাওয়া সেন্ডেলের চেয়ে দামী ব্র্যান্ডের। কাহিনী কিন্তু শেষ হয় নাই টুইস্ট কিন্তু বাকি আছে। পরদিন চাচা কি চাচা সেই মসজিদে গিয়ে খতিবকে ‘গতরাতে আপনাদের এখান থেকে কি কোন স্যান্ডেল চুরি হয়েছে’ বলতেই তিনি বললেন ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, নতুন একজোড়া স্যান্ডেল চুরি হয়েছে, চেয়ারম্যান সাহেবের।’ চাচা মনে মনে ভাবলেন পড়বি তো পড় মালীর ঘাড়েই! চাচা বললেন, ‘আপনি কি স্যান্ডেল চোর ধরতে চান? তাহলে আজ আপনাদের এখানে তাবলীগের যে দলটা আসবে তার হুজুরের পায়ে দেখবেন সেই স্যান্ডেল।’ তারপর চাচা তাবলীগে না গিয়ে সোজা বাড়ি চলে আসলেন। পরের ঘটনা আর নাই বললাম। হুজুরের মুরগী খাবার ইচ্ছা অন্তত আর হবেনা।

দুই
আপনারা জানেন আমার বাড়ি রাজশাহী। ব্যপার সেটা না ব্যপার হল আম। আম কুড়ানোর যে কি মজা যে এই কাজ না করেছে তাকে বলে বোঝানো যাবেনা। চাচা প্রতিদিন খুব ভোঁরে ঘুম থেকে উঠে ছোট্ট একটা টর্চ নিয়ে আম কুঁড়াতে যেতেন। আমও পেতেন বেশ! সব কিছুই রুটিন মাফিক হচ্ছিল। কিন্তু একদিন বাগানে গিয়ে কোন আম পেলেন না। তার মনে হল কার এত বড় সাহস! আমার আগে এভাবে আম কুঁড়িয়ে নেয়। সকাল বেলা জানতে পারলেন পাশের বাড়ির দুই ফুপু এই কাজ করেছে। এবার যাবে কোথায় পড়েছ মোগলের হাতে খানা খেতে হবে সাথে। পরদিন শেষ রাতের দিকে চাচা একটা লম্বা সাদা চাঁদর নিয়ে বাগানে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর দেখলেন ফুপুরা আসছে। ব্যাস তিনি চাদরটি দিয়ে মুখ ঢেকে দুইহাত উঁচু করে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন। এরপর ফুপুরা তো দুরের কথা অন্য কেওই আর রাতের বেলা বাগানে যেত না।

তিন
এবারের ঘটনা শীতে। সে বার প্রচুর শীত পড়েছে। মাঘ মাস তার পরে হিম শ্বৈত্য প্রবাহ চলছে। এমন এক রাতে চাচা ও এলাকার এক বড় ভাই বসে গল্প করছে-
চাচাঃ দাউদ বেটা এবার খুব জাড়(শীত) পড়ছে তাই না?
দাউদঃ হ্যাঁ গো চাচা। কিন্তু আমাখে এত জাড় লাগে না।
চাচাঃ তাই! এখুন পারবি সাঁতার কাট্যা পুকুরের এ মাথা থাইকা ঐ মাথায় যাতে?
দাউদঃ কুনু ব্যপার! কি দিবা বুলো?
চাচাঃ দশটা ডিম খাওয়াবো।
দাউদঃ ঠিক আছে।
দাউদ ভাই নেংটি ঠুকে পুকুরে ঝাঁপ দিলেন আর চাচা আর এক দিক দিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে গেলেন।



আরো অনেক অনেক কাহিনী আছে পরে সময় পেলে শেয়ার করব।

সেই চাচা এখন কত সংসারিক। একটা উপজেলার ইউ এন ও পদে চাকরি করছেন। জীবনের অনেকটা বছর সেই চাচার হাত ধরে ঈদগাহে গেছি। কিন্তু এখন সবাই ব্যস্ত নিজ কর্মে। আপনাকে অনেক মিস করি চাচা। আপনি কি পারবেন না এবারের ঈদটা আমাদের সাথে করতে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন